
মদীনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় ১৫০ কি:মি: দূরে অবস্থিত এই সেই ঐতিহাসিক বদর প্রান্তর
১৭ রামাযান:
বদরের প্রাঙ্গণে বিজয়ের প্রথম সূর্যোদয়
► ১৭ রমজান। মাহে রমজানের অপরাপর মোবারক দিনের ঊর্ধ্বেও ইসলামের ইতিহাসে এ দিনটির একটি উজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত হয়ে আছে। রমজানের রোজা ফরজ হয়েছে হিজরতের দ্বিতীয় বছর থেকে। অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরি সনে। আর সে বছরই রমজান মাসের ১৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছে ইসলামের প্রথম সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী যুদ্ধ, ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার প্রথম-রক্তক্ষরা মহাসংগ্রাম: জঙ্গে বদর, গজওয়ায়ে বদর বা বদরের যুদ্ধ।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দীর্ঘ ১৩ বছর অতিবাহিত করেন মক্কা মোকাররমায়। এরপর তিনি আল্লাহর হুকুমে মক্কায় বসবাসরত সাহাবিদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের দ্বিতীয় বছরেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নেতৃত্বে গঠিত মদিনা রাষ্ট্রটি মক্কার কাফের শক্তির পক্ষ থেকে হুমকির মুখোমুখি হয়।
সিরিয়া থেকে ফেরার পথে মক্কার কাফেরদের একটি বাণিজ্য কাফেলা মুসলিম শক্তির প্রতিরোধের মুখে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মক্কা থেকে এক হাজার কাফের সেনার একটি সশস্ত্র দল মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত ‘বদর’ ময়দানে এসে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করে। এ অবস্থায় মাত্র ৩১৩ জন সাহাবিকে (যাদের মধ্যে মক্কা থেকে আসা মুহাজির ও মদিনায় বসবাসরত আনসাররা ছিলেন) নিয়ে বদর ময়দানের আরেক পাশে উপস্থিত হন শান্তি ও মানবতার নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ ছিল এক অসম যুদ্ধ। একদিকে সত্যের পক্ষে মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধা, প্রায় নিরস্ত্র। সঙ্গে দুটি ঘোড়া, ৭০টি উট আর যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অল্প কয়েকটি ঢাল-তরবারি। অপরদিকে সশস্ত্র ১ হাজার যোদ্ধা, মিথ্যার পক্ষে। তাদের নিয়ন্ত্রণে একশ’টি ঘোড়া আর ৭শ’টি উট। যুদ্ধটি বিপুলভাবে অসম হলেও বিকাশমান মুসলিম শক্তির জন্য এ ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক মহাসংগ্রাম। সত্য-মিথ্যার সিদ্ধান্ত টানা এক লড়াই। এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠতম দূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দরবারে প্রার্থনায় লুটিয়ে পড়েন। হৃদয় উজাড় করে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকেন। আবেগ, কাতরতা, প্রেম আর আশ্রয়ের এক ভুবনজয়ী চেতনা থেকে তিনি প্রার্থনা করে বলেন—
এ যুদ্ধে মুসলমানদের এই ছোট্ট দলটি পরাজিত হলে তোমাকে ডাকার মতো আর কোনো লোক দুনিয়ায় থাকবে না হে আল্লাহ! প্রিয়তম বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মাওলায়ে করিম মুসলমানদের বিজয় দান করেন। এ যুদ্ধে সাহাবি যোদ্ধা শহীদ হন ১২ থেকে ১৪ জন আর কাফেরদের মধ্যে উত্বা, শাইবা, আবু জেহেলের মতো শীর্ষ কাফেরসহ ৭০ জনের মতো নিহত হয়। বন্দি হয় আরও ৭০ জন।
বদর যুদ্ধের অভূতপূর্ব বিজয়ে মুসলমানদের ভিত দৃঢ়তর হয়। এরপরও মক্কার কাফের ও মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে মক্কা বিজয় পর্যন্ত উহুদ, খন্দক, খয়বরের মতো আরও ক’টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুসলমানদের নামতে হয় বাধ্য হয়ে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় মক্কা বিজয়ের পরও আরও কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে সংঘটিত বদর যুদ্ধের তাত্পর্য সবসময়ই অনন্য মহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে। বদর যুদ্ধে নিবেদিত মুজাহিদ সাহাবিদের সবসময়ই গণ্য করা হয় সবচেয়ে মর্যাদাবান শ্রেণী হিসেবে। যাদেরকে বলা হয়, বদরী সাহাবী।
ইসলামের অস্তিত্বের প্রথম সকালে ধেয়ে আসা অন্ধকারের ঝড়ের মুখে আত্মনিবেদনের যে উজ্জ্বল অনুশীলন বদরের প্রান্তরে সাহাবিরা করেছেন, তার সঙ্গে রমজানের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংযম ও আল্লাহর হুকুমের সামনে আত্মবিসর্জনের অপূর্ব এক সাদৃশ্য বিদ্যমান। ইসলামে জিহাদ যে কেবল জয়ের জন্য যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ প্রস্তুতি মাত্র নয়, রক্ত ও মৃত্যুর বিভীষিকা যে জিহাদের মূল চিত্র ও চেতনা নয়, বদরের প্রান্তরে প্রার্থনার কান্না, যুদ্ধকালে রোজা রেখে ক্ষুধার্ত থাকা আর শান্তি ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ধরে রাখার মধ্য দিয়ে ‘বদর যুদ্ধ’ তার এক উজ্জ্বল মানবিক রূপ উপহার দিয়েছে।
রমজান মনুষ্যত্ব ও আল্লাহর দাসত্বকে অস্তিত্বে ধারণ এবং লালন করার যে শিক্ষা দিয়ে যায়, রোজা ফরজ হওয়ার প্রথম বছর দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে তারই এক চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল। ইসলামের আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, সাধনা, প্রার্থনা, সেবা, আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের সব অধ্যায় যে একই সূত্রে গাঁথা, তার এক মহান স্বাক্ষর দ্বিতীয় হিজরির এই ১৭ রমজান। বদর যুদ্ধের এই সামগ্রিক শিক্ষা বিকশিত হোক প্রত্যেক মুসলমানের অন্তর ও জীবনে।
উৎস: নয়া দিগন্ত, ৫ আগস্ট ২০১২ইং
লেখক: হাসনাইন হাফিজ
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী
পরিচালক, সালাফী বিডি ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
Assalamu Alaikum
Very nice posting. But when I download the PDF version, the Pictures that are showing in web page, are not available in the PDF version. So, please always make the PDF format will the full contents of an article.
jajakallaho khairan