সত্যবাদী রোযাদার

সত্যবাদী রোযাদার

আল্ হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিহিল্ কারীম, আম্মা বাদ:

       ভাই মুসলিম! প্রতি বছর রোযার মাস আসে আবার চলে যায়। আমরা অনেকে রোযা পালন করি, ঈদ উদযাপন করি, আবার পূর্বের জীবন যাত্রায় ফিরে আসি। রোযা ও রোযার মাস আমাদের জীবনে কোন পরিবর্তন আনে না। কোন প্রভাব ফেলে না। প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজেরাই পরিবর্তন আনতে চাই না। আমরাই আমাদের জীবনের দীনী পরিবর্তনে অনিচ্ছুক। না হলে ভেবে দেখুন! রোযার মাসে কিন্তু আপনার জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল কিন্তু সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা আমরা পরে রক্ষা করি না। আর বারংবার এ রকম হতে থাকলে আসলে রোযার মুখ্য উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। রোযার প্রকৃত সওয়াব অর্জন হয় না। কারণ এই প্রকার লোকেরা যখন রোযার মাস আসে তখন শুরুতেই ভেবে নেয় যে, এটা রোযার সময় তাই একটু ভাল হয়ে থাকতে হবে, কিছুটা সংযত হতে হবে, রোযা শেষ হলে পূর্বে যেমন ছিলাম তেমনই থাকবো। অত:এব বুঝা গেল, তার সততায় সে আন্তরিক নয়, খাঁটি নয়। কারণ সে এই মাসের পর পুনরায় মন্দের দিকে ফিরে যাওয়ার গোপন ইচ্ছা রাখে। বলুন তো আল্লাহ কি আপনার এই গোপন নিয়তটির খবর জানেন না? অথচ আল্লাহ খাঁটি ভাবে কেবল তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই ইবাদত করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন: ( তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম।) [বাইয়্যিনাহ/৫]

     নিম্নে এই মাসে কিছু চমৎকার সৎ আমল করার এবং অসৎ আমল বর্জন করার তালিকা দেয়া হয়েছে, যা পালন করলে মুসলিম ভাই যেমন অঢেল নেকী অর্জন করার পাশাপাশি এগুলোর মাধ্যমে তার জীবনে পরিবর্তনও আসতে পারে। আছেন কি কোন সত্যবাদী ও সাহসী ইসলাম প্রিয় ভাই যিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই রমযান মাসের রুটিন মেনে অনেক হারাম কাজ ছেড়ে সঠিক পথের পথিক হবেন

নিন্মোক্ত কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করে আল্লাহর রহমতে এই রামাযানেই জীবনকে বদলে দয়া সম্ভব:

১) কুরআন পড়তে শেখা:  কত দুর্ভাগা সে, যে বাংলা, ইংরেজি সহ অনেক ভাষা জানে কিন্তু আল্লাহর বাণী কুরআন পড়তে জানে না। কুরআন পড়াতে পারে এই রকম এক ব্যক্তির নিকট চাইলে আপনি এক মাসে কুরআন পড়া শিখতে পারেন। বর্ণ পরিচয় ৭ টি ক্লাস + উচ্চারণ ও বানান প্রক্রিয়া ৭ টি ক্লাস + রিডিং ৭ টি ক্লাস + বিবিধ ৭ = ২৮ টি ক্লাস।

২) কুরআন খতম:  প্রতি ওয়াক্তে আযানের সাথে সাথে মসজিদে আসলে সুন্নত পড়ার পরেও দশ মিনিট সময় পাওয়া যায়। এই ভাবে পাঁচ ওয়াক্তে ৫০ মিনিট। আর ৫০ মিনিটে সাধারণ ভাবে এক পারা তিলাওয়াত ভাল ভাবে সম্ভব। আর একটু সময় দিলে অর্থ সহ কুরআন খতমও  হতে পারে।

) অতিরিক্ত ৩০টি রোযার সওয়াব: সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, রোযাদারকে ইফতার করালে একটি রোযার সওয়াব পাওয়া যায়; অথচ ইফতার কারীর কোন নেকী কম হয় না। মানুষ অতিরিক্ত আয়োজন ও খরচ ছাড়াই ইফতার করার সময় প্রতিদিন এক ব্যক্তিকে নিজ ইফতারীতে শরীক করে এই সওয়াবের অধিকারী হতে পারে।

) একটি হজ্জ ও উমরার নেকী:  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে ফজরের নামায আদায় করলো, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকির-আযকার করলো, তার পর দুই রাকাআত নামায আদায় করলো, সে একটি হজ্জ ও উমরার নেকী পেল।’’ [ তিরমিযী ] এই সুযোগটি গ্রহণ করা কতই না সুন্দর!

৬)  নেশা পরিত্যাগ করা: বিড়ি, সিগারেট, গুল ও তামাক সেবন যেমন শরীয়তে হারাম, তেমন সমাজেও অপছন্দনীয়। এসবের আসক্ত লোকেরা রোযাবস্থায় এসব সেবন করে না। যে ব্যক্তি এ সব এক দিন ছেড়ে থাকতে পারে সে দুই দিন ও এক সপ্তাহও না সেবন করে থাকতে পারে। এসব নেশা ছাড়াতে রোযা হতে পারে একটি উত্তম মাধ্যম।

) গান-বাজনা পরিত্যাগ: গান-বাজনা শুনতে অভ্যস্ত লোকেরা রোযার মাসে কুরআন তিলাওয়াত তথা ওয়ায-নসীহতের ক্যাসেট ও সিডি শুনার মাধ্যমে এই হারাম অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারে।

) প্রকৃত নামাযী  হওয়া:      রামযান ছাড়া যারা অন্যান্য মাসে শুধু জুমুআর নামায পড়ে কিংবা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ভালভাবে জামাতের সহিত পড়তে অলসতা করে কিংবা ফজরের নামাযে অলসতা করে, তারা রমযান মাসে সমস্ত নামায সঠিক সময়ে আদায় করার অভ্যাসের মাধ্যমে প্রকৃত নামাযী হতে পারেন।

৮) যাকাত প্রদান: যাকাত প্রদানে অলস বা বছরে কোন এক সময় নির্ধারণে অলস ব্যক্তি এই মাসটি নির্বাচন করতে পারেন। ফযীলতের মাস হিসাবে অধিক নেকীর ও আশা করা যায়।

৯) দানের অভ্যাস: যেহেতু রোযার মাসে সওয়াব বেশী তাই প্রতিদিন কিংবা জুমআর দিন কিংবা শেষ দশকে সাধ্যমত ফকীর-মিসকিন ও অভাবীদের মাঝে নিজ সম্পদের কিয়দংশ প্রদান করা কতই না সুন্দর অভ্যাস!

১০) পরিবারের খেয়াল: আমরা অনেকে সারা বছর কর্ম ব্যস্ততায় ছুটাছুটি করি। পরিবারকে সময় দিতে পারি না। আমরা এই মাসটি তাদের মাঝে থেকে যেমন সহজ ভাবে রোযা করতে পারি তেমন তাদের ভালবাসা ও তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারি।

প্রিয় ভাই ! বরকত পূর্ণ রমযান মাসে এই রকম কিছু সৎ আমল করার দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে আমরা নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি, আল্লাহর পথে ফিরে যেতে পারি। নচেৎ প্রতি বছর রোযা আসবে আবার চলে যাবে, আর আমরা পূর্বের মতই থেকে যাবো! এটাই কি রোযার আসল উদ্দেশ্য? হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে:

 ‘‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের জন্যে দৃঢ় সংকল্প করে কিন্তু তা করতে পারে না, তবুও আল্লাহ তার জন্যে পরিপূর্ণ নেকী লেখেন; আর দৃঢ় সংকল্পের পর সে যদি তা করে, তবে আল্লাহ নিজের কাছে তার জন্য দশ নেকী থেকে সাতশ’ পর্যন্ত বরং তার থেকেও বেশী নেকী লেখেন।’’ [ বুখারী এবং মুসলিম ]

  • লেখক: দুআ’র আশাবাদী, আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার, খাফজী, সউদী আরব ।
  • সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

www.salafibd.wordpress.com

4 thoughts on “সত্যবাদী রোযাদার

  1. আসসালামু আলাইকুম্। আমাদের প্রত্যেককে সত্যবাদী হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। কারন সত্যবাদীদের পুরষ্কার আল্লাহ পাক হাশর ময়দানে নিশ্চয় দিবেন। খোদা হাফেজ।

  2. আসলে আমাদের সত্যবাদী রোযাদার হওয়ার বেশী প্রয়োজন আছে। নচেৎ রোযাদার তো অনেকে রয়েছেন।

আপনার মতামত বা প্রশ্ন লিখুন।

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s