জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০

জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

 

প্রিয় বন্ধুগণ, আমরা জানি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদীস এক একটি আইন, একটি সংবিধান ও একটি নীতি। যার সূত্র ধরে যুগে যুগে মানব জাতি তাদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে মানবতা তাদের জীবন চলার দিক নির্দেশনা খুঁজে নিবে। তাই যে কোন হাদীস গ্রহণ করার আগে তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া অপরিহার্য। যার কারণে যুগে যুগে মুহাদ্দেসীনগণ হাদীসের বিশুদ্ধতা অনুসন্ধানের নিমিত্তে হাদীসের বর্ণনাকারী, বর্ণনা সূত্র এবং হাদীসের মূল বক্তব্যের মাঝে কোন রূপ সংযোজন-বিয়োজন কিম্বা পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে কি না তা অতি সূক্ষ্ম ভাবে চুল চেরা বিশ্লেষণ করে হাদীসটির প্রতি সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন যে, এটি আদৌ হাদীস কি না অথবা তা সহীহ না জঈফ। এটি অত্যন্ত জটির একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে তারা এ কাজটি অভূতপূর্ব সাফল্যের সাথে  সম্পন্ন করে গেছেন। সুতরাং কেউ ইচ্ছা করলেই কোন কথাকে হাদীস বলে চালিয়ে দিতে পারবে না।

 

আমরা দেখব, আমাদের সমাজে অনেক কথা হাদীস হিসেবে প্রচলিত কিন্তু বাস্তবে সেগুলো হাদীস নয় অন্য কথায় সেগুলো জাল হাদীস। এ সম্পর্কে মুসলমান ভাইদেরকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে এখানে কতিপয় জাল ও জঈফ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আসুন, আমরা সেগুলো দেখি এবং জানার চেষ্টা করি।

১) “দ্বীন (ধর্ম)  হচ্ছে বিবেক, যার দ্বীন নেই তার কোন বিবেক নেই।” 

হাদীসটি বাতিল

সূত্রঃ “ আল-কুনা ”  এবং  “ আল-কুনা ওয়াল  আসমা ”  গ্রন্থে আবূ মালেক বিশর ইবনু গালিব সূত্রে যুহরী হতে বর্ণিত।            

বাতিল বলেছেনঃ ইমাম নাসাঈ (রহঃ) , হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ও আল্লামা আলবানী (রহঃ) ।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ)  বলেনঃ “বিবেক সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা।” ( আল-মানার; পৃঃ ২৫ )

২) “পুরুষদের ইচ্ছা ( মনোবল )  পর্বতমালাকে স্থানচ্যূত করতে পারে।”

    এটি হাদীস নয়।

বাতিল বলেছেনঃ ইসমাঈল আজলুনী (রহঃ) এর মন্তব্য–“এটি যে হাদীস তা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি নি।” (কাশফুল খাফা)।  আল্লামা আলবানী (রহঃ) ও হাদীসটিকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন ।

৩) “মসজিদের মধ্যে কথোপকথন পূণ্যগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে ফেলে।”

                হাদীসটি ভিত্তিহীন।

 সূত্রঃ “ ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন” (১/১৩৬)

বাতিল বলেছেনঃ হাফিয ইরাকী (রহঃ) , হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ), আব্দুল ওয়াহাব সুবকী (রহঃ) , আল্লামা আলবানী (রহঃ)

 ৪) “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।”

                হাদীসটি জাল।

জাল বলেছেনঃ ইমাম সাগানী (রহঃ)  ও অন্যান্য ইমামগণ ।

৫) “যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে , সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে।”

                হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।

বাতিল বলেছেনঃ  ইমাম নববী (রহঃ), ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) হাফিয সাখাবী (রহঃ), ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), শাইখ আল-কারী (রহঃ)।

ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেনঃ  যদিও অধিকাংশ লোক এটিকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর হাদীস বলে চালাচ্ছেন, তবুও এটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর ভিত্তিই সহীহ নয়। এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায় বর্ণিত ।

৬) “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ জুম’আর দিবসে পাগড়ী ধারীদের প্রতি দয়া করেন।

                     হাদীসটি জাল

সূত্রঃ “আল-মু’জামাল কাবীর” এবং “আল-হিলইয়াহ” (৫/১৮৯-১৯০)  গ্রন্থে  আলা ইবনু আমর হানাফী সূত্রে আইউব ইবনু মুদরেক হতে বর্ণিত।

জাল বলেছেনঃ ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ), হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ), ইমাম উকাইলী (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী (রহঃ), ইমাম আল-আলবানী (রহঃ) ।

৭) “আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী।”

                  হাদীসটি জাল।

সূত্রঃ “ আল- মু’জামুল আওসাত”।  (২/২৮৫,১/ ৯৩০১ )।

হাদীসের রাবীর (আব্দুল আযীয) সমালোচনা করেছেনঃ  ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম হায়সামী (রহঃ), ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), হাফিয ইরাকী (রহঃ), ইমাম ইবনু মাঈন (রহঃ), ইমাম ইবনু আররাক (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী (রহঃ), আল্লামা আল-আলবানী (রহঃ) ।  

৮) “পাগড়ীসহ সালাত পড়া দশ হাজার ভাল কর্মের সমতুল্য।”

                                     হাদীসটি জাল।

সূত্রঃ “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ’ আহ” (পৃঃ ১১১ )  গ্রন্থে আবান নামক এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত।

 জাল বলেছেনঃ  ইমাম সাখাবী (রহঃ), হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ), ইমাম মানূফী (রহঃ), শাইখ আল- কারী (রহঃ) ।

ইমাম সুয়ূতী (রহঃ ) বর্ণনাকারী আবান সম্পর্কে বলেনঃ আবান মিথ্যার দোষে দোষী। ইমাম ইবনুল আররাক (রহঃ) “তানযীহুশ শরীয়াহ” (২/২৫৭) গ্রন্থেও একই মন্তব্য করেছেন।

৯) “মুমিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে  আরোগ্য।”

                    হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।

ভিত্তি নেই বলেছেনঃ  শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ), শাইখ আজলূনী (রহঃ) ।

 শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ) বলেনঃ এটি কোন হাদীস নয়।  (আল-যাদ্দুল হাসীস )

১০) “যে ব্যক্তি তর্জনী অংগুলি দু’টির ভিতরের অংশ দ্বারা মুয়ায্‌যিন কর্তৃক আশ্‌-হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার সময় দু’চোখ মাসেহ করবে; তার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে যাবে।”

                        হাদীসটি সহীহ নয়।

সুত্রঃ  এটি  “মুসনাদুল ফিরদাউস”  গ্রন্থে রয়েছে ।

 সহীহ নয় বলেছেনঃ ইমাম ইবনু তাহির (রহঃ) (আত-তাযকীরাহ), ইমাম শওকানী (রহঃ)  (আহাদিসুল মাওযূ’আহ), ইমাম সাখাবী (রহঃ)  (মাকাসিদুল হাসানা) ।

(আল ইসলাম বাংলা ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম থেকে সংকলিত)।

চলবে ইনশাআল্লাহ….

8 thoughts on “জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০

  1. Pingback: শুব্বান | জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ - শুব্বান

  2. Pingback: জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১৬-১৯ | বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস

  3. এ ধরনের জাল ও জঈফ হাদীস সম্পর্কে আমাদের সমাজকে অবিহিত করতে পারলে সত্তিই আমরা অনেক কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে পারবো, তাছাড়া অনেকক্ষেত্রে ভিত্তিহীন জেনেও অনেক কুসংস্কার অন্ধের মত মানা হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হক্ক প্রচারে শামিল হওয়ার তাওফীক দিন।

আপনার মতামত বা প্রশ্ন লিখুন।

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s